Sunday, December 21, 2014

মিছিল হবে জেনেও ছুটির শহরে যানজট রুখতে ব্যর্থ পুলিশ







কখন ছাড়বে গাড়ি? ছোট্ট চোখের জিজ্ঞাসা। রবিবার, জওহরলাল নেহরু রোডে।

আনন্দবাজার
কলকাতা


মিছিলের কথা জানা ছিল। যে ধর্মীয় মিছিল হয় প্রতি বছরই, তাতে জনসমাগম কেমন হতে পারে, যান চলাচলে তার কতটা প্রভাব পড়তে পারে— সে আন্দাজও থাকার কথা ছিল। তবু খোদ পুলিশেরই কর্তা বললেন, “এক কিলোমিটার লম্বা মিছিল আট কিলোমিটার পথ পেরোলে কী প্রভাব হতে পারে, তা আগাম বিশ্লেষণই করা হয়নি।” যার মাসুল গুনে রবিবারও দিনভর যানজটে হাঁসফাঁস করল কলকাতা। সঙ্গে বিষফোঁড়া ছুটির দিনে বেশি সময়ের ব্যবধানে এবং নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে দেরিতে চলা মেট্রো।

পুলিশ জানায়, দুপুর থেকে বিকেল শহরের দক্ষিণ থেকে উত্তর, অন্তত ৮ কিলোমিটার সড়কপথে যান চলাচলের দফারফা হয়ে যায়। শনিবার শহিদ মিনারে এক ধর্মীয় সংগঠনের সমাবেশের জেরে ব্যাপক যানজট হয়। আগের পাঁচ দিনও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের একাধিক সমাবেশ-মিছিলে নাজেহাল হয়েছিলেন শহরবাসী। সব মিলিয়ে গোটা সপ্তাহটাই যানজট-দুর্ভোগে কাটল মহানগরের।

তবে এ দিনের ভোগান্তির এটাই একমাত্র কারণ নয়। রাস্তায় আটকে মানুষ পাতালপথ ধরে পৌঁছতে চাইলেও সুরাহা মেলেনি। একে রবিবার মেট্রো কম চলে। তার উপরে চার-পাঁচ মিনিট দেরিতে ট্রেন স্টেশনে পৌঁছচ্ছিল। শীতের দুপুরে তিলধারণের জায়গা এমনিতেই ছিল না। তার উপরে দেরির জন্য ভিড় বেড়েই চলে। দরজা এক বারে বন্ধ না হওয়ায় পরের স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় বাড়ছিল। নিট ফল, চক্রাকারে যাত্রী-ভোগান্তি বৃদ্ধি।

দুপুর ১টায় স্ত্রী ও আট বছরের ছেলেকে নিয়ে জাদুঘরের উদ্দেশে বেরোন চেতলার প্রিয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। সাধারণত রবিবারে ট্যাক্সিতে ওই দূরত্ব যেতে আধ ঘণ্টার বেশি লাগার কথা নয়। কিন্তু ভবানীপুরে যদুবাবুর বাজার পর্যন্ত পৌঁছে ট্যাক্সি আর নড়ল না। সামনে বাস-মিনিবাস-ট্যাক্সি-প্রাইভেট গাড়ির লম্বা লাইন। মিনিট দশেক বসে থাকার পরে প্রিয়জিৎবাবুরা যখন বুঝলেন অপেক্ষা করে লাভ নেই, তখন নেমে পড়েন নেতাজি ভবন মেট্রো স্টেশনে। রবিবারের মেট্রো তখন আধ ঘণ্টা অন্তর। সেই ট্রেনও এল চার মিনিট দেরিতে। ভিড়ে উঠতেই পারলেন না। আধ ঘণ্টা পরের ট্রেনেও একই রকম ভিড়, একই রকম দেরি। সেটাও ছাড়তে বাধ্য হলেন। আরও একটি ট্রেন ছেড়ে দিয়ে শেষমেশ যখন জাদুঘরে পৌঁছলেন, তখন সাড়ে তিনটে। দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

পেশায় সিস্টেম অ্যানালিস্ট প্রিয়জিৎবাবুর কথায়, “রবিবারেও মিছিল থেকে নিস্তার নেই। মানুষের যাতে অসুবিধা না হয়, সে জন্য পুলিশকে বিশেষ ব্যবস্থা নিতেও দেখলাম না। বাড়ি থেকে আজ বেরোনোই ভুল হয়েছিল।”

পূর্বঘোষিত সূচি অনুযায়ী, রাসবিহারী মোড় থেকে সওয়া ১১টা নাগাদ শুরু হয় মিছিল। লালবাজারের এক সূত্র জানাচ্ছে, এতে অংশ নেন প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ। প্রায় এক কিলোমিটার লম্বা মিছিলটির গন্তব্য ছিল মহাত্মা গাঁধী রোড, অর্থাৎ আট কিলোমিটার পথ। যে পথ শহরের দক্ষিণের সঙ্গে উত্তরের যোগাযোগের প্রধান রাজপথ। রাসবিহারী মোড় থেকে বেরিয়ে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড, আশুতোষ মুখার্জি রোড, জওহরলাল নেহরু রোড, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ধরে মহাত্মা গাঁধী রোডে মিছিল পৌঁছয় বিকেল চারটে নাগাদ। পাঁচ ঘণ্টা ধরে বিভিন্ন সময়ে এই দীর্ঘ পথে হাজরা, যদুবাবুর বাজার, এলগিন, এক্সাইড, তারামণ্ডল, ডোরিনা, ধর্মতলার মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে তুমুল যানজটের কবলে পড়লেন রাস্তায় বেরোনো মানুষ।

পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি জানা সত্ত্বেও পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিল না কেন?

লালবাজারের এক কর্তার বক্তব্য, “ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, তা ঠিক নয়। মিছিলের অবস্থান অনুযায়ী আমরা এক এক সময়ে এক-একটি মোড়ে গাড়ি ঘুরিয়ে দিচ্ছিলাম।” তবে এক্সাইড ও তারামণ্ডলের মতো মোড়ে পুলিশের এই ধরনের সক্রিয়তা দেখা গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু মিছিলের পথ যেখানে নির্দিষ্ট, সেখানে আগে থেকে পরিকল্পনা মাফিক সমান্তরাল রাস্তা দিয়ে গাড়ি ঘোরানোর উদ্যোগ চোখে পড়েনি। উত্তরমুখী গাড়ি হাজরা মোড় থেকে শরৎ বসু রোড দিয়ে ঘোরানোর ব্যাপারে সহযোগিতা করতে পারত পুলিশ, ভবানীপুর তল্লাটের ভিতর দিয়েও পথ দেখানোর ব্যবস্থা করা যেত। কিন্তু সে সব হয়নি।

কলকাতা পুলিশের এক অফিসারের কথায়, “আসলে রবিবার বলে কেউ সে ভাবে গা করেনি। ভাবখানা ছিল, রবিবার ক’টা লোক, ক’টা গাড়িই বা বেরোয়!” ওই কর্তা সাফ বলেন, “ভাবা হয়নি, এর সঙ্গে মেট্রোর সমস্যা মিশলে পরিস্থিতি কতটা খারাপ হতে পারে!” রাস্তায় না হয় মিছিল ছিল, মেট্রোর লাইনে তো অবরোধ হয়নি, তবে মেট্রো কেন ভোগাল? মেট্রোর বক্তব্য, দুপুরের একটি ট্রেন কবি সুভাষ থেকে ছাড়ার পরেই আটকে যায়। ভিড়ের চাপ এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, দরজায় গোলমাল সারাতে গিয়ে প্রায় মিনিট দশেক দেরি হয়। তাতেই পরের কয়েকটি ট্রেন বেশ কিছুক্ষণ দেরিতে চলাচল করেছে।

No comments:

Post a Comment

Thanks for your comment. We will be reply back to you.